আমরা বাজার থেকে যে চিনি কিনে খাই সেটার ইংরেজি নাম টেবল সুগার। রাসায়নিক নাম সুক্রোজ।
সুক্রোজ নামটার সাথে আরবী সুক্কারুন – এর বেশ মিল পাওয়া যায়। ইংরেজি সুগার-ও এর কাছাকাছি।
চিনির এই একটা অণুতে কী কী আছে?
আরো দুটো অণু – গ্লুকোজ আর ফ্রুকটোজ।
এজন্য সুক্রোজকে ডাইস্যাকারাইড বলে। রসায়নের চোখে দেখলে ব্যাপারটাকে এভাবে আঁকা যায়।

গ্লুকোজ আর ফ্রুকটোজ বিক্রিয়া করে এক অণু পানি বের করে দিয়ে যা তৈরি হয় তার নাম সুক্রোজ।
মজার ব্যাপার হচ্ছে গ্লুকোজ আর ফ্রুকটোজ দিয়ে তৈরি আরেকরকম চিনিকে আমরা আম আদমীরা চিনি না। তার নাম ইনভার্ট সুগার বা ‘উল্টো চিনি’। সেটা গুণেধর্মে সুক্রোজের একেবারেই উল্টো।

উলটো চিনি দেখতে কিন্তু তরল! চিনির সিরার মত লাগলেও তা চিনির সিরা নয়!
সুক্রোজ এবং উল্টো চিনি দুটিই গ্লুকোজ ও ফ্রুক্টোজ দিয়ে গঠিত।
দুটির মাঝে পার্থক্য কী তাহলে? সুক্রোজ বা টেবল সুগার পাওয়া যায় দোকানে। আর উল্টো চিনি পাওয়া যায় মধুতে।
আর পার্থক্য রাসায়নিক গঠনে। সুক্রোজে গ্লুকোজ ও ফ্রুক্টোজ ডাই-স্যাকারাইড বন্ধনে আবদ্ধ থাকে, কিন্তু উল্টো চিনিতে দ্রবণে সমপরিমাণ গ্লুকোজ ও ফ্রুক্টোজ দ্রবীভূত অবস্থায় থাকে – তাদের মাঝে কোনো বন্ধন থাকে না।
এই পার্থক্যের ফলে সুক্রোজের রাসায়নিক ও ভৌত ধর্ম উল্টো চিনি থেকে আলাদা।

সুক্রোজের চেয়ে ইনভার্ট চিনি ১.৩ গুণ বেশি মিষ্টি। এ কারণে বড় বড় কনফেকশনারিতে উল্টো চিনি বেশি ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎ ১০০ কেজি সুক্রোজ কিনে সেটাকে হাইড্রোলাইসিস করে উল্টো চিনি বানিয়ে ফেললে ১৩০ কেজি সুক্রোজের কাজ করা যাবে।তবে সুক্রোজকে হাইড্রোলাইসিস না করে শুধু পানিতে দ্রবীভূত করলে কিন্তু সেটা উল্টো চিনি হবে না, হবে চিনির সিরা। চিনির সিরাতেও ডাই-স্যাকারাইড বন্ধনটা অটুট থাকে।
ইনভার্ট চিনির সুবিধা হচ্ছে সে গঠনের দিক দিয়ে সহজ সরল। এজন্যই মৌমাছিরা উল্টো চিনিকে ভীষণ ভালোবাসে।
সাধারণত, মধুতে প্রাকৃতিকভাবে সুক্রোজ উপস্থিত থাকে তবে এর পরিমাণ অনেক কম – ১%-৬%। আর মধুতে ইনভার্ট চিনির পরিমাণ ৮০% ছাড়িয়ে যেতে পারে।
মৌমাছি তাদের গ্রন্থিনিঃসৃত ইনভার্টেজ এনজাইমের সাহায্যে সুক্রোজ বিয়োজিত করে ইনভার্ট চিনিতে পরিণত করে। চাক থেকে সরিয়ে অন্য পাত্রে রাখলেও এই এনজাইম সুক্রোজের বিয়োজন অব্যাহত রাখে।
মৌমাছিকে সাধারণ চিনি খাওয়ানো হলে তারা সেটাকে প্রথমে ইনভার্ট চিনি এবং পরে মধুতে পরিণত করে।
এ কাজে মৌমাছির বাড়তি শক্তি আর সময় লাগে। আর এ মধু যে নিম্নমানের তা বলাই বাহুল্য।
তবে বাংলাদেশে যারা খাঁটি মধু বিক্রি করেন তেমন মৌচাষিরাও মৌমাছিকে ঘোর বর্ষাকালে চিনি পানি খাওয়ান। সেটা অবশ্য মধু উৎপাদনের জন্য নয়, মৌমাছিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য। বরষায় মৌমাছিদের প্রাকৃতিক খাবার – ফুলের রসের সংকট দেখা দেয়। তখন পানিতে চিনি গুলে মৌমাছিগুলোকে বাঁচিয়ে অপেক্ষা করা হয় – কবে শীত আসবে!
ফুল ফোটার মৌসুম যখন ফিরে আসে তখন মৌমাছিদের শুভদিন-ও ফেরে। আর মৌচাক ভরে ওঠে উলটো চিনিতে!